০৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জবি ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন

  • Reporter Name
  • প্রকাশের সময়ঃ ০৪:১৪:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৭৯ বার পড়া হয়েছে

 

 

জবি প্রতিনিধি, মোঃ রাসেল খানঃ বাংলা নববর্ষের আনন্দে মাতলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (১৪ এপ্রিল ২০২৫) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ, প্রাণের উচ্ছ্বাস ও বাঙালিয়ানার গর্বিত প্রকাশ। নববর্ষকে বরণ করতে ছিল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রকাশনা প্রদর্শনীর বর্ণাঢ্য আয়োজন।

শোভাযাত্রার উচ্ছ্বাসে নববর্ষের সূচনা
সকাল ৯:৩০টায় উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য নববর্ষ শোভাযাত্রা। রায়সাহেব বাজার ও ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে এটি ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
“বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে আসুক নেমে আলো, নববর্ষে মুক্ত জীবন থাকুক আরো ভালো”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত শোভাযাত্রায় চারুকলা অনুষদ তুলে ধরে বাঙালির প্রাণের প্রতিচ্ছবি। শোভাযাত্রায় ছিল সূর্যমুখী ও শাপলা ফুল, অরিগামি পাখি, তালপাতার সেপাই, গরুর গাড়ি ও গ্রামবাংলার নানা ঐতিহ্য।

প্রথমবারের মতো বৈশাখী মেলা ও প্রকাশনা প্রদর্শনী
শোভাযাত্রা শেষে মুক্তমঞ্চ চত্বরে ও পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল মাঠে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। এই প্রথমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, পিঠাপুলি, লোকজ পণ্য ও খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বসে নানা স্টল।
এছাড়া, ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় আয়োজন করা হয় প্রকাশনা প্রদর্শনী, যেখানে তুলে ধরা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের প্রকাশনা ও সৃষ্টিশীল কাজ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাণের জোয়ার
সকাল ১১টায় উপাচার্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। তিনি বলেন, “১৪৩১ বঙ্গাব্দে দেশের মানুষের যে ত্যাগ ও সংগ্রাম আমরা দেখেছি, তারই ফসল আজকের এই মুক্ত পরিবেশে নববর্ষ উদযাপন। এ অর্জন ধরে রাখতে চাই সম্মিলিত প্রয়াস।”
বিজ্ঞান ভবন চত্বরে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক আয়োজনে সংগীত বিভাগের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় দর্শকরা। নাট্যকলা বিভাগ মঞ্চস্থ করে জনপ্রিয় যাত্রাপালা ‘ভেলুয়া সুন্দরী’।
এছাড়া, আবৃত্তি সংসদ, জবি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ছিল কবিতা, নৃত্য ও নানা সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। বিকাল ৩টায় জবি ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের ব্যান্ড কনসার্টে মাতোয়ারা হয় পুরো ক্যাম্পাস।

উৎসবের রঙে রাঙা প্রিয় ক্যাম্পাস
সারাদিনব্যাপী এই আয়োজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিণত করে এক প্রাণবন্ত উৎসবস্থলে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলা ঘটে এ আয়োজনে।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন শুধু বিনোদনের নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ে ফেরার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই আয়োজন নতুন প্রজন্মের মাঝে বাঙালির গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার একটি মূল্যবান প্রয়াস হয়ে রইল।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে র‍্যাবের অভিযান, ফেনসিডিলসহ আটক ৩

জবি ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন

প্রকাশের সময়ঃ ০৪:১৪:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

 

 

জবি প্রতিনিধি, মোঃ রাসেল খানঃ বাংলা নববর্ষের আনন্দে মাতলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (১৪ এপ্রিল ২০২৫) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ, প্রাণের উচ্ছ্বাস ও বাঙালিয়ানার গর্বিত প্রকাশ। নববর্ষকে বরণ করতে ছিল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রকাশনা প্রদর্শনীর বর্ণাঢ্য আয়োজন।

শোভাযাত্রার উচ্ছ্বাসে নববর্ষের সূচনা
সকাল ৯:৩০টায় উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য নববর্ষ শোভাযাত্রা। রায়সাহেব বাজার ও ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে এটি ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
“বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে আসুক নেমে আলো, নববর্ষে মুক্ত জীবন থাকুক আরো ভালো”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত শোভাযাত্রায় চারুকলা অনুষদ তুলে ধরে বাঙালির প্রাণের প্রতিচ্ছবি। শোভাযাত্রায় ছিল সূর্যমুখী ও শাপলা ফুল, অরিগামি পাখি, তালপাতার সেপাই, গরুর গাড়ি ও গ্রামবাংলার নানা ঐতিহ্য।

প্রথমবারের মতো বৈশাখী মেলা ও প্রকাশনা প্রদর্শনী
শোভাযাত্রা শেষে মুক্তমঞ্চ চত্বরে ও পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল মাঠে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। এই প্রথমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, পিঠাপুলি, লোকজ পণ্য ও খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বসে নানা স্টল।
এছাড়া, ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় আয়োজন করা হয় প্রকাশনা প্রদর্শনী, যেখানে তুলে ধরা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের প্রকাশনা ও সৃষ্টিশীল কাজ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাণের জোয়ার
সকাল ১১টায় উপাচার্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। তিনি বলেন, “১৪৩১ বঙ্গাব্দে দেশের মানুষের যে ত্যাগ ও সংগ্রাম আমরা দেখেছি, তারই ফসল আজকের এই মুক্ত পরিবেশে নববর্ষ উদযাপন। এ অর্জন ধরে রাখতে চাই সম্মিলিত প্রয়াস।”
বিজ্ঞান ভবন চত্বরে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক আয়োজনে সংগীত বিভাগের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় দর্শকরা। নাট্যকলা বিভাগ মঞ্চস্থ করে জনপ্রিয় যাত্রাপালা ‘ভেলুয়া সুন্দরী’।
এছাড়া, আবৃত্তি সংসদ, জবি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ছিল কবিতা, নৃত্য ও নানা সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। বিকাল ৩টায় জবি ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের ব্যান্ড কনসার্টে মাতোয়ারা হয় পুরো ক্যাম্পাস।

উৎসবের রঙে রাঙা প্রিয় ক্যাম্পাস
সারাদিনব্যাপী এই আয়োজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিণত করে এক প্রাণবন্ত উৎসবস্থলে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলা ঘটে এ আয়োজনে।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন শুধু বিনোদনের নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ে ফেরার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই আয়োজন নতুন প্রজন্মের মাঝে বাঙালির গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার একটি মূল্যবান প্রয়াস হয়ে রইল।