
✍️মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহঃ
সাম্প্রতিক সময়ে জামাতে ইসলামের একজন নেতা আমির হামজা বলেছেন,নবী অর্থ সংবাদ বাহক।সেই অর্থে
তিনিও সাংবাদিক ছিলেন।
—নাউজুবিল্লাহ
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে এরকম শব্দ চয়ন কোন আলেম করতে পারে না জাহেল ব্যতীত।
★★রাসুল (ﷺ)
এঁর শানে বেয়াদবি করা কুফরি…
সূরা নূরের ৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন…
لَا تَجۡعَلُوۡا دُعَآءَ الرَّسُوۡلِ بَیۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُمۡ بَعۡضًا ؕ قَدۡ یَعۡلَمُ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ یَتَسَلَّلُوۡنَ مِنۡكُمۡ لِوَاذًا ۚ فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِهٖۤ اَنۡ تُصِیۡبَهُمۡ فِتۡنَۃٌ اَوۡ یُصِیۡبَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
অনুবাদ:তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।
📖হাশিয়ায়ে তাফসিরে সাভী সুরা নুরের ৬৩আয়াতের ব্যাখ্যা এবং তাফসীরে জালালাইন কিতাবের ৩০২পৃষ্ঠার ১০নং হাশিয়ায় সুরা নুর আয়াত ৬৩ ব্যাখ্যায় লিখা রয়েছে-
من إستخف بجنابه صلي الله عليه وسلم فهو كافر وملعون في الدنيا والأخرة
অর্থ- যে ব্যক্তি নবীজিপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক খাটো করবে,সে কাফের ও অভিশপ্ত হবে দুনিয়া আখেরাতে।
★★এবার আসুন আমরা নবী ও সাংবাদিক শব্দের বিশ্লেষণ করি!
“নবী” শব্দের অর্থ
আরবি: نَبِيّ মূল ধাতু: نَبَأَ নাবা’ অর্থ:সংবাদ, খবর,বার্তা,প্রকাশ, উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।
কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় (شرعًا) “নবী” অর্থ:যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি লাভ করেন এবং তা মানুষের কাছে পৌঁছান।”
নবী করিম ﷺ কে “সাংবাদিক (Journalist / صحافی)” বলা জায়েয নয়, বরং এটি অসম্মানজনক ও গোমরাহীপূর্ণ শব্দপ্রয়োগ। কারণ, “সাংবাদিকতা” পেশা মানুষের সংবাদ সংগ্রহ, প্রচার বা বিশ্লেষণের জন্য হয় — অথচ নবুওত সংবাদ সংগ্রহ নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী প্রাপ্তি ও তাবলিগ করার একটি আল্লাহপ্রদত্ত মহান দায়িত্ব।
📖কোরআনের দলিল…
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ
“হে রাসূল! আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তা আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে পৌঁছে দিন।” (সূরা মায়িদা ৫:৬৭)
এখানে “বাল্লিগ” (پہنچانا) অর্থ নবুওতের কাজ আল্লাহর ওহী পৌঁছে দেওয়া, সংবাদ সংগ্রহ নয়। নবী ﷺ কোনো মানবীয় উৎস থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেননি; বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী পেয়েছেন।
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
“তিনি নিজের খেয়াল-খুশি থেকে কথা বলেন না; এটি তো ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রেরিত হয়।”
— (সূরা নাজম ৫৩:৩-৪)
অর্থাৎ নবী ﷺ এর কথাগুলো আল্লাহর ওহী। সাংবাদিক নিজের জ্ঞান বা তথ্য ব্যবহার করে লেখে, কিন্তু নবী ﷺ আল্লাহর আদেশে কথা বলেন। তাই তুলনা করা ভ্রান্ত ও অবমাননাকর।
📖হাদিসের দলিল…
إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ، وَاللهُ يُعْطِي
“আমি তো বণ্টনকারী, দান করেন আল্লাহ।”
— (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩১১৬)
নবী ﷺ বলেছেন, তিনি আল্লাহর দান বণ্টন করেন — অর্থাৎ ওহী ও হিদায়াত পৌঁছে দেন, কোনো তথ্য সংগ্রাহক বা প্রচারক হিসেবে নয়।
📚 ফিকহী ও আকীদার দৃষ্টিতে (فتاویٰ):
ফতোয়ায়ে শামী (ردالمحتار):
ومن أطلق على النبي لفظًا يفيد النقص أو الاستخفاف كفر
“যে কেউ নবীর জন্য এমন শব্দ ব্যবহার করে যা তাচ্ছিল্য বা ঘাটতি প্রকাশ করে, সে কাফির হয়ে যায়।”
— (رد المحتار على الدر المختار، ج 4، ص 236)
নবী ﷺ কে এমন পেশাগত উপমা (যেমন সাংবাদিক, অভিনেতা, লেখক ইত্যাদি) দেওয়া হলে, তা তাঁর মর্যাদা হ্রাস করে; তাই এটি হারাম, কখনো কখনো কুফর পর্যায়েরও হতে পারে।
নবী সংবাদ দেন বটে, তবে সেই সংবাদ আল্লাহর ওহি দ্বারা, কোনো পার্থিব সাংবাদিকতার মতো নয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে এমন তুলনা করা তাঁর মর্যাদা অবমাননা (تنقيص النبي) হিসেবে গণ্য হতে পারে।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন…
لِّتُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُعَزِّرُوۡهُ وَ تُوَقِّرُوۡهُ ؕ وَ تُسَبِّحُوۡهُ بُكۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا
“যেন তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো, তাঁকে সাহায্য করো ও সম্মান করো।”
(সূরা আল-ফাতহ ৪৮:৯)
রাসূলের মর্যাদা “সাংবাদিক” পর্যায়ে নামিয়ে আনা — এটি সম্মান নয়, বরং তুচ্ছতাচার।
যদি কেউ অজ্ঞতাবশত এমন কথা বলে, তবে তাকে বুঝিয়ে তওবা করতে বলা হবে।
কিন্তু যদি সে জেনেশুনে, অহংকারভরে নবীর মর্যাদা হ্রাস করে এমন কথা প্রচার করে, সে
রাসূলের প্রতি অবমাননা করল।
📚 ইসলামী শরীয়তের মতে:
“যে ব্যক্তি নবীর অবমাননা করে, সে কাফের।”
সুতরাং পরিশেষে বলবো মিষ্টার আমির হামজা সাহেব আপনি অতি দ্রুত আল্লাহর কাছে তাওবা করুন এবং প্রকাশ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় এসে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থী হন।
আর যদি তাওবা না করেন তবে কাফের হিসাবে গণ্য হবেন এবং আপনার বউ তালাক হয়ে যাবে আপনার জন্য, আবার নতুন করে ইমান এনে মুসলমান হয়ে বিবাহ করতে হবে।