০৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কালিগঞ্জে ‘হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল’-এর বিরুদ্ধে ভুয়া রিপোর্ট ও চিকিৎসা প্রতারণার অভিযোগ

সাতক্ষীরাঃ চিকিৎসার নামে প্রতারণা, ভুল রিপোর্ট প্রদান ও রোগীর শারীরিক ক্ষতির অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের স্থানীয় “হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল”-এর বিরুদ্ধে হেভিওয়েট অভিযোগ করেছে এক ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী মোঃ ফজলুর রহমান উপজেলার গড়ুইমহল গ্রামের ক’জনের নিকট তিনটি সরকারি দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন—উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের কাছে। অভিযোগটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং প্রশাসন তৎপরতা শুরু করেছে।

ভুক্তভোগী ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন, তিনি অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার আবু মুসার পরামর্শে ওই হাসপাতালটি ভর্তির মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষা করান। সেখানে করা আল্ট্রাসনোগ্রামসহ পরীক্ষার রিপোর্টে চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকলেও রিপোর্টে অদ্ভুত ও অসম্ভব তথ্য উল্লেখ ছিল—একজন পুরুষ রোগীর রিপোর্টে (জরায়ু) সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

পরে অন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে বিষয়টি যাচাই করে তিনি নিশ্চিত হন যে রিপোর্টটি জাল এবং চিকিৎসকের স্বাক্ষরও ভুয়া। ফজলুর বলেন, “ল্যাব সহকারীরা চিকিৎসকের স্বাক্ষর জাল করে একটি মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেই ভুয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নেওয়ার ফলে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। আমি প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছি; তবু এখন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ছাড়পত্র বা ভাউচারও দেয়নি। আমি ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

অভিযোগ পাওয়ার পর কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, “অভিযোগটি হাতে পেয়েছি এবং প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় ক্লিনিক জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছে বা ভুল রিপোর্ট দিয়েছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য সেবায় এ ধরনের অনিয়ম কোনোভাবেই সহনীয় নয়।” উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান,“এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত গুরুতর। আমরা অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং ইতোমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। প্রমাণিত হলে ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “ভুল রিপোর্ট বা চিকিৎসা জালিয়াতি স্বাস্থ্যসেবার নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন। আমরা নিশ্চিত করব যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের প্রতারণার শিকার না হয়।”

স্থানীয় সচেতন মহল ও এলাকাবাসী বলছে, ক্লিনিক দীর্ঘদিন ধরে নিয়মবহির্ভূতভাবে রোগীদের কাছ থেকে অপ্রতিস্পর্ধি অর্থ আদায় করছিল—এমন অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে। তারা প্রশাসনকে দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন; কিছু লোক ক্লিনিকটির সব কার্যক্রম যাচাই করে প্রয়োজনে তা বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি করেছেন।

একজন স্থানীয় বলেন, “চিকিৎসার নামে ব্যবসা নয়—মানবতার সেবা চাই। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে আহত ও গরিব রোগীরা বারবার হতভাগ্যের শিকার হবে।” এ ঘটনার পর পরই প্রশাসনের তদন্ত শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষ আশাবাদী যে দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তি কার্যকর করা হবে। ভুক্তভোগী ফজলুর রহমান তার চিকিৎসাগত ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভবিষ্যতে অন্য কেউ যাতে এমন প্রতারণার শিকার না হয় সে নিশ্চয়তা চান।এ বিষয় “হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল” পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এর সাথে সরাসরি আলাপকালে তিনি বলেন, পুরুষের জরায়ু সমস্যা রিপোর্টটি ভুলবশত হয়ে গেছে। এই রোগ সাধারণত মেয়ে মানুষের হয়ে থাকে। আমাদের ল্যাব টেকনিশিয়ান কম্পিউটারের ফরম্যাটে ভুল করেছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

মধুপুরে শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ও নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

কালিগঞ্জে ‘হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল’-এর বিরুদ্ধে ভুয়া রিপোর্ট ও চিকিৎসা প্রতারণার অভিযোগ

প্রকাশের সময়ঃ ০৭:২৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

সাতক্ষীরাঃ চিকিৎসার নামে প্রতারণা, ভুল রিপোর্ট প্রদান ও রোগীর শারীরিক ক্ষতির অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের স্থানীয় “হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল”-এর বিরুদ্ধে হেভিওয়েট অভিযোগ করেছে এক ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী মোঃ ফজলুর রহমান উপজেলার গড়ুইমহল গ্রামের ক’জনের নিকট তিনটি সরকারি দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন—উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের কাছে। অভিযোগটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং প্রশাসন তৎপরতা শুরু করেছে।

ভুক্তভোগী ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন, তিনি অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় গ্রাম ডাক্তার আবু মুসার পরামর্শে ওই হাসপাতালটি ভর্তির মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষা করান। সেখানে করা আল্ট্রাসনোগ্রামসহ পরীক্ষার রিপোর্টে চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকলেও রিপোর্টে অদ্ভুত ও অসম্ভব তথ্য উল্লেখ ছিল—একজন পুরুষ রোগীর রিপোর্টে (জরায়ু) সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

পরে অন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে বিষয়টি যাচাই করে তিনি নিশ্চিত হন যে রিপোর্টটি জাল এবং চিকিৎসকের স্বাক্ষরও ভুয়া। ফজলুর বলেন, “ল্যাব সহকারীরা চিকিৎসকের স্বাক্ষর জাল করে একটি মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেই ভুয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নেওয়ার ফলে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। আমি প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছি; তবু এখন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ছাড়পত্র বা ভাউচারও দেয়নি। আমি ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

অভিযোগ পাওয়ার পর কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, “অভিযোগটি হাতে পেয়েছি এবং প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় ক্লিনিক জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছে বা ভুল রিপোর্ট দিয়েছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য সেবায় এ ধরনের অনিয়ম কোনোভাবেই সহনীয় নয়।” উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান,“এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত গুরুতর। আমরা অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং ইতোমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। প্রমাণিত হলে ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “ভুল রিপোর্ট বা চিকিৎসা জালিয়াতি স্বাস্থ্যসেবার নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন। আমরা নিশ্চিত করব যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের প্রতারণার শিকার না হয়।”

স্থানীয় সচেতন মহল ও এলাকাবাসী বলছে, ক্লিনিক দীর্ঘদিন ধরে নিয়মবহির্ভূতভাবে রোগীদের কাছ থেকে অপ্রতিস্পর্ধি অর্থ আদায় করছিল—এমন অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে। তারা প্রশাসনকে দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন; কিছু লোক ক্লিনিকটির সব কার্যক্রম যাচাই করে প্রয়োজনে তা বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি করেছেন।

একজন স্থানীয় বলেন, “চিকিৎসার নামে ব্যবসা নয়—মানবতার সেবা চাই। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে আহত ও গরিব রোগীরা বারবার হতভাগ্যের শিকার হবে।” এ ঘটনার পর পরই প্রশাসনের তদন্ত শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষ আশাবাদী যে দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তি কার্যকর করা হবে। ভুক্তভোগী ফজলুর রহমান তার চিকিৎসাগত ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভবিষ্যতে অন্য কেউ যাতে এমন প্রতারণার শিকার না হয় সে নিশ্চয়তা চান।এ বিষয় “হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল” পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এর সাথে সরাসরি আলাপকালে তিনি বলেন, পুরুষের জরায়ু সমস্যা রিপোর্টটি ভুলবশত হয়ে গেছে। এই রোগ সাধারণত মেয়ে মানুষের হয়ে থাকে। আমাদের ল্যাব টেকনিশিয়ান কম্পিউটারের ফরম্যাটে ভুল করেছে।