০৩:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানিকগঞ্জ ঘিওরে তীব্র শ্রমিক সংকট, ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বোরো ধান কাটার মৌসুমে তীব্র শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে অনেক কৃষক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজেরাই ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভের বদলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।

ঘিওর উপজেলার নন্দীর বাধা এলাকার কৃষক রাব্বি জানান, প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটার জন্য সাড়ে ছয় হাজার টাকা দিতে চেয়েও শ্রমিক পাননি। অবশেষে ধানের খড় দেওয়ার বিনিময়ে ধান কাটাতে পারছেন তিনি।

চরবাইলজুরী গ্রামের কৃষক মোঃ জুড়ান মিয়া বলেন, “দুই দিন ধরে খুঁজে তিন বিঘা জমির জন্য শ্রমিক পেয়েছি। তাদের বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরা বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি নিচ্ছেন।

সংকটের সবচেয়ে করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে। সিংজুরী গ্রামের কৃষক মো. রহিজ উদ্দিন চুক্তিতে জমি নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত ধানের প্রতি ১০ মণে ৪ মণই জমির মালিককে দিতে হবে। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, “এখন উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, আবাদ করে আটকে গিয়েছি। বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলেই জমির ধান কাটছি।”

অন্যদিকে, শ্রমিকরা বলছেন জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেশি মজুরি ছাড়া তাদের উপায় নেই। কুড়িগ্রাম থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক হামেদ আলী জানান, ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে তিনি দিনে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা আয় করেন। তিনি বলেন, “জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে এই টাকায়ও আমাদের সংসার চালানো কঠিন।”

আরেক শ্রমিক মো. রমজান আলী বলেন, “ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় সব জায়গায় শ্রমিকের চাহিদা। কৃষকের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা কম। তাই মজুরি বেশি না নিলে আমাদেরও চলে না।”

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তহমিনা খাতুন বলেন, “মানিকগঞ্জের প্রায় সব এলাকায় একযোগে ধান কাটা শুরু হওয়ায় সাময়িকভাবে শ্রমিকের এই সংকট তৈরি হয়েছে।” তিনি আরও জানান, সরকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধান কাটার যন্ত্রে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে একই সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হারভেস্টার বা ধান কাটার যন্ত্রেরও সংকট দেখা দিয়েছে।

Tag :
About Author Information

জনপ্রিয়

মানিকগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী জাহিদুর রহমানের গণসংযোগ

মানিকগঞ্জ ঘিওরে তীব্র শ্রমিক সংকট, ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক

প্রকাশের সময়ঃ ০৭:৪০:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বোরো ধান কাটার মৌসুমে তীব্র শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে অনেক কৃষক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজেরাই ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভের বদলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।

ঘিওর উপজেলার নন্দীর বাধা এলাকার কৃষক রাব্বি জানান, প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটার জন্য সাড়ে ছয় হাজার টাকা দিতে চেয়েও শ্রমিক পাননি। অবশেষে ধানের খড় দেওয়ার বিনিময়ে ধান কাটাতে পারছেন তিনি।

চরবাইলজুরী গ্রামের কৃষক মোঃ জুড়ান মিয়া বলেন, “দুই দিন ধরে খুঁজে তিন বিঘা জমির জন্য শ্রমিক পেয়েছি। তাদের বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরা বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি নিচ্ছেন।

সংকটের সবচেয়ে করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে। সিংজুরী গ্রামের কৃষক মো. রহিজ উদ্দিন চুক্তিতে জমি নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত ধানের প্রতি ১০ মণে ৪ মণই জমির মালিককে দিতে হবে। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, “এখন উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, আবাদ করে আটকে গিয়েছি। বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলেই জমির ধান কাটছি।”

অন্যদিকে, শ্রমিকরা বলছেন জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেশি মজুরি ছাড়া তাদের উপায় নেই। কুড়িগ্রাম থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক হামেদ আলী জানান, ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে তিনি দিনে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা আয় করেন। তিনি বলেন, “জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে এই টাকায়ও আমাদের সংসার চালানো কঠিন।”

আরেক শ্রমিক মো. রমজান আলী বলেন, “ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় সব জায়গায় শ্রমিকের চাহিদা। কৃষকের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা কম। তাই মজুরি বেশি না নিলে আমাদেরও চলে না।”

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তহমিনা খাতুন বলেন, “মানিকগঞ্জের প্রায় সব এলাকায় একযোগে ধান কাটা শুরু হওয়ায় সাময়িকভাবে শ্রমিকের এই সংকট তৈরি হয়েছে।” তিনি আরও জানান, সরকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধান কাটার যন্ত্রে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে একই সময়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হারভেস্টার বা ধান কাটার যন্ত্রেরও সংকট দেখা দিয়েছে।