
সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সরকারি সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামি রওশন কাগুচির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গত (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নয়ন বিশ্বাস শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামি রওশন কাগুচি উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের মৃত জিয়াদ আলী কাগুচির ছেলে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি জমি দখল,দলিল জালিয়াতি এবং চেয়ারম্যানের সরকারি সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালান। যা আইনগতভাবে একটি গুরুতর অপরাধ।
কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাফিয়া খাতুন এ প্রসঙ্গে বলেন,আমার সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানিয়ে জমি আত্মসাৎ করার চেষ্টা চালিয়েছে রওশন কাগুচি। বিষয়টি আমি আদালত ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। সত্য কখনো চাপা থাকে না, আদালতেই সব প্রমাণিত হবে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সততা ও স্বচ্ছতাই আমার মূলনীতি।কোনো মহল ইচ্ছাকৃতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালেও আমি জনগণের পাশে নির্ভীকভাবে দাঁড়িয়ে থাকব।”
ঘটনার সূত্রপাত প্রয়াত শিক্ষক বিমল কৃষ্ণ ঘোষের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থেকে। তার স্ত্রী সীতা রানী ঘোষ অভিযোগ করেন, তার স্বাক্ষর জাল করে জমির দলিল তৈরি করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত ২১ আগস্ট রওশন কাগুচি জোরপূর্বক সীতা রানী ঘোষ, তার পুত্রবধূ শ্যামলী রানী ঘোষ ও নাতনিদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করলে স্থানীয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে। তবে বিরোধ এখনো চলমান।
সীতা রানী ঘোষ বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। চেয়ারম্যান সাহসী ভূমিকা না নিলে আমরা হয়তো সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হতাম। এখন ন্যায়বিচারের আশা করছি। শুনানির সময় বিচারক নয়ন বিশ্বাস পর্যবেক্ষণে বলেন, অভিযোগের গুরুতরতা বিবেচনায় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে আসামিকে মুক্তি দিলে মামলার স্বচ্ছতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
আইনজীবীরা জানান, ভূমি দখল, দলিল জালিয়াতি ও জনপ্রতিনিধির সিল-স্বাক্ষর জাল করার মতো অপরাধ গ্রামীণ সমাজে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে প্রতারণা ও জালিয়াতির প্রবণতা আরও বাড়বে। এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, চেয়ারম্যান সাফিয়া খাতুন যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন এবং ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা গ্রামীণ সমাজে অবৈধ দখল ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে এক ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার সততা, দৃঢ়তা এবং ন্যায়পরায়ণ অবস্থান শুধু ভুক্তভোগী পরিবারকেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থা ও সাহস জুগিয়েছে।মামলাটি এখন আদালতের নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। তবে চেয়ারম্যান সাফিয়া খাতুনের ন্যায়নিষ্ঠ অবস্থান ইতোমধ্যেই গ্রামীণ সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।