
জাবি প্রতিনিধিঃ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) জুমার নামাজের পর দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ” খুনি লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না”, ” টেইক ব্যাক খুনি লীগ “, ” জেনারেল ওয়াকার, হুশিয়ার সাবধান “, ” আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো, করতে হবে, করতে হবে “, ” আওয়ামী লীগের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান ” ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়৷
বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ানের সঞ্চালনায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। এসময় বক্তারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানায়।
সমাবেশে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, “যে ফ্যাসিস্ট দল বাংলাদেশে একাধিক গণহত্যা চালিয়েছে তাদেরকে নিষিদ্ধ করার জন্য নতুন কোনো কারণ দরকার নাই৷ আমরা মনে করি ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতা শেখ হাসিনাকে বিদায় করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখান করেছে। আমরা ইন্টেরিমকে বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগকে ফেরানোর কোনো পরিকল্পনা যদি আপনারা করেন তাহলে ছাত্রজনতা কতোটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা আপনারা ২৪শে দেখেছেন। আমরা সেনাবাহিনীকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই আপনারা যদি ঢাকার বাইরে অন্য কোনো দেশের বা অন্য কোনো এজেন্সির প্রেসক্রিপশনে চলতে চান তাহলে আপনাদেরকেও ছেড়ে কথা বলবো না। যারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ভারতের প্রেসক্রিপশনে চালাতে চায় তাদেরকে আমরা শেখ হাসিনা যে পথে গেছে সেই পথে পাঠায়ে দিবো।”
তৌহিদ সিয়াম আরো বলেন, “ওয়াকার সাহেবকে সাবধান করে বলে দিতে চাই, আপনি যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা প্রদান করেন তাহলে আপনার আত্মীয় যেই পথে গেছে আপনাকেও সেই পথে পাঠিয়ে দিবো। আওয়ামী লীগকে এই বাংলায় কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম, রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া যাবে না৷ ইন্টেরিমের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে অতি দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আজকে আমাদের জন্য একটি দুঃখের দিন, কারণ, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়েও আমাদেরকে আবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। অথচ ৫ আগষ্ট জনগণ গণভোটের মাধ্যমে রায় দিয়ে দিছিলো বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগ চলবে না, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলা মানে আমাদের শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী করা। আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকা পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দিবো না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। আমরা রক্ত দিতে চাই না, আমরা প্রচুর রক্ত দিয়েছি। এই রক্তের বদলা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের মাধ্যমেই দিতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী দল হিসেবে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে৷ বাংলাদেশে কারা রাজনীতি করবে সেটা ঠিক করবে বাংলাদেশের ছাত্রজনতা৷ পাশ্ববর্তী দেশের কোনো দেশের প্রেসক্রিপশনে আর বাংলাদেশ চলবে না৷ সেনাবাহিনীকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আপনারা জনগণের পাশে থাকুন। আপনারা যদি আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসনের চেষ্টা করেন তাহলে ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে আপনাদের ক্ষেত্রেও একই রায় দিবে৷ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য আমরা রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলির সামনে বুক পেতে দিতে প্রস্তুত আছি।”
সমাপনী বক্তব্যে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্বে।বাংলার ছাত্রজনতা ঠিক করবে এই বাংলাদেশে কারা রাজনীতি করতে পারবে। এটা কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো এজেন্সি ঠিক করবে না। যে বা যারা আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে আমাদের পরবর্তী যুদ্ধ হবে সেই দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার সকল ষড়যন্ত্র বাংলার ছাত্রজনতা রুখে দিবে।”