মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে পোষ্টার লাগানো নিয়ে প্রতিদ্বন্দী দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ, সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় আড়াই ঘন্টা অবরোধের একপর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ, পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফা নাজনীন, ইউএনও মো. বেলাল হোসেন, ওসি আব্দুর রউফ সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দোয়াত কলম প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রহিম খানের নির্বাচনী ক্যাম্প ডাক্তার খানা এলাকায়, আনারস প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউর রহমান খান জানুর কর্মীরা পোস্টার টানাতে যায় । এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে রহিম খানের কর্মীরা জানুর কর্মী সিয়াম ও জনি’র উপর অতর্কিত হামলা করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফোলা জখম করে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ফাহিম রহমান খান রনি ঘটনাটি জানার পর তার চাচাতো ভাই আরুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোনায়েম মোস্তাকিন খান অনিককে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তার খানায় যাওয়া মাত্র সেখানে থাকা আব্দুর রহিম খানের ভাগ্নে শিবালয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন ও কর্মী দেবাশীষ ঘোষ জয় তাদের গালিগালাজ শুরু করে। একপর্যায়ে রনির কর্মীরা এগিয়ে গেলে আলাল ও জয় ঘোষ তাদের লাঠিসোঠা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। পরর নিজের জীবন রক্ষায় রনি নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে রহিম খানের লোকজন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বোয়ালী বাসষ্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে অবস্থান নিলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি, পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত হয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনার ভিত্তিতে আড়াই ঘন্টা পর পরিস্তিতি স্বাভাবিক হয়।
মানিকগঞ্জ ১ আসনের এমপি এসএম জাহিদ শিবালয় থানার সামনে আয়োজিত সমাবেশে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের গ্রেফতার করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেনা। যারা অরাজক পরিস্থিতি ঘটিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
রেজাউর রহমান জানুর কর্মী সিয়াম ও জনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ বিষয়ে রেজাউর রহমানের সমর্থক আবু আহাদ বাদী হয়ে শিবালয় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অবরোধের ঘটনায় ঘটনা স্থলের উভয় দিকে কয়েক’শ যানবাহন আটকা পড়লে যাত্রীরা দূর্ভোগ পোহায়। ‘হুমকি প্রদর্শন ও গুলি বর্ষণে’ রহিম খানের সমর্থক দেবাশীষ ঘোষ জয় শিবালয় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ফাহিম রহমান খান রনি বলেন, ‘আমাদের জনি ও সিয়াম নামের দুই কর্মীকে মেরেছে—এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে (ডাক্তার খানা) এলাকায় যাবার পথে মহাসড়ক এলাকায় আলাল ও জয় ঘোষ গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে আমাদের কর্মীরা তাদের দিকে এগিয়ে গেলে তারা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা করতে আসে। একপর্যায়ে নিজের জীবন রক্ষায় আমি এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করি।’
তবে ফাহিম খান রনির অভিযোগ অস্বীকার করে দেবাশীষ ঘোষ জয় বলেন, ‘এই ঘটনা আমি কোনো ভাবে অবগত ছিলাম না।আমি স্থানীয় এমপি সাহেবের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। সেখান থেকে আমার বাড়ি ডাক্তার খানায় এসে দাঁড়িয়ে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছি। এমন সময় রনি ও তার চাচাতো ভাই অনিক এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। পরে আমার এলাকার মানুষ তাদের ধাওয়া করে সরিয়ে দেয়।’
এ বিষয়ে শিবালয় থানার (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে রহিম খানের কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রনির কর্মীদেরও রাস্তায় দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দেবাশীষ ঘোষ জয় নামের একজন ও অপর পক্ষ থেকে আবু আহাদ নামে একজন অভিযোগ দিয়েছে।