আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ ইং

শিবালয়ে আংশিক কাজ করে কাবিখা প্রকল্পের বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে

স্টাফ রিপের্টার : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নে ২০২২—২০২৩ অর্থ বছরে মন্ত্রালয়ের বিশেষ বরাদ্দকৃত কাবিখা প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের সভাপতি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, উথলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রতির বাড়ী থেকে ডক্টর মীর ফেরদৌস হোসেনের বাড়ী পর্যস্ত রাস্তা পুন: নির্মাণের জন্য ১৪ টন চাল উপ—বরাদ্দের জন্য প্রকল্পটির অনুমোদন হয় এবং কাজের সময় বেধে দেওয়া হয় গত অর্থ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আব্বাস আলী সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার আ: মান্নান প্রকল্পের নাম মাত্র সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন আব্দুর রহিমকে। গত অর্থবছরের ৩০ জুন তারা প্রকল্পের কাজ না করেই সভাপতিকে ডেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব কৃষ্ণের অফিসে নিয়ে স্বাক্ষর রেখে বিল উত্তোলন করে তারা। এ বিষয় নিয়ে জানা জানি হলে ২০২৩—২৪ অর্থ বছরে উথলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্বাস আলীর নেতৃত্বে মান্নান মেম্বার কাতরাসীন ইছামতি নদী হতে বালু চুরি করে আংশিক রাস্তার কাজ সম্পন্ন করে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি আব্দুর রহিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাকে তারা সভাপতি বানিয়েছে ঠিকই আমি এ রাস্তার কাজের কিছুই জানিনা। গত বছর ৩০ জুন জুয়েল আমাকে পি আই ও অফিসে গিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে আসতে বলেছিল তাই আমি স্বাক্ষর দিয়ে এসেছি। এই রাস্তার কাজ কে করছে তা আমি জানি না। তবে লোক মারফত জানতে পারলাম এ কাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে দিয়ে করাইতেছে।
অপরদিকে ইউনিয়নের নয়াবাড়ি বাজার হতে মুন্নাফ মৃধার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুন:নির্মানের জন্য ৩০ মে: টন চাউল বরাদ্দ হয় গত অর্থ বছরে এবং এ কাজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আব্বাস আলী। কিন্তু তিনি গত অর্থ বছরে কাজ না করে চলিত অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা —২০২১ না মেনে পরিপূর্ণভাবে কাজ না করে দায়সারা ভাবে রাস্তা পুন: মেরামত করে। যা বর্ষ বা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীতে চলে যাবে এমনটাই বললেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে উথুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি মো: আব্বাস আলী বলেন, ২০২২—২৩ অর্থ বছরের প্রকল্পের টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইএনওর নামে পে—অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা রেখে আমরা চলিত অর্থ বছরে রাস্তার কাজ করি। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাস্তার কাজ আংশিক হয়েছে এবং উচ্চতা অনুযায়ী স্লোভ হয় নাই এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রাস্তার কাজ সঠিক ভাবে করেছি। এই রাস্তার কাজ করতে গিয়ে আমার ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
আবার মুন্নাফ মৃধার বাড়ি হতে দক্ষিন আরা গ্রামের আক্কাস মুন্সির বাড়ি পর্যন্ত গত অর্থ বছরে ২য় অংশের জন্য বরাদ্দ হয় ৩০ মে: টন চাউল। এ কাজের সভাপতি হয় স্থানীয় মেম্বার খবির উদ্দিন। তিনিও গত অর্থ বছরে কাজ না করে চলিত বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা না মেনে পরিপূর্ণভাবে কাজ না করে দায়সারা ভাবে রাস্তা পুন: মেরামত করে। যা বর্ষা বা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীতে চলে যাবে এমনটাই বললেন এলাকাবাসী।
প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় মেম্বার খবির উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি ২০২২—২৩ অর্থ বছরে রাস্তার কাজ যথা সময়ে করেছি। রাস্তার উচ্চতা অনুযায়ী স্লোভ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন রাস্তার বাজেট অনুযায়ী কাজ হয়েছে।
একই অর্থ বছরে নয়াবাড়ি বাজার হতে জয়নুদ্দিন মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মানে কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দ পায় ৬ টন চাউল। পূর্বের প্রকল্পের ন্যায় এ কাজেরও ব্যাপক অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন এলাকাবাসী।
রাস্তা নির্মানে অনিয়মের বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি মো: শাহিনুরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি প্রকল্পের কাগজে সই করে দিয়েছি,কাজটা আব্বাস চেয়াম্যান, খবির মেম্বার ও পিআইও মিলে করেছে, আমি কোন লেনদেনে নাই।
প্রকল্পের সভাপতি ও দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা মন্ত্রালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা —২০২১ মোতাবেক প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রতিনিধিদের সরেজমিনে তদারকি বা জবাব দিহিতার আওতায় এনে সর্বসাধারণের নিকট তা দৃশ্যমান করার কথা থাকলেও তা করেননি । আবার নতুনভাবে সংস্কারকৃত গ্রামীণ রাস্তার দুই পার্শ্বে স্থায়ী কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে তাল গাছের চারা রোপনের কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি উল্লেখিত প্রকল্পগুলোতে।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব কৃষ্ণের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এ প্রকল্পগুলো ২০২২—২৩ অর্থ বছরের শেষের দিকে হওয়ায় আমরা কাজ করতে পারিনি। তাই টাকা গুলো পে—অর্ডরের মাধ্যমে ডিডি করে জমা রেখে দিয়ে চলিত অর্থ বছরে কাজ করছি। উথলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রতির বাড়ী থেকে ডক্টর মীর ফেরদৌস হেসেনের বাড়ী পর্যস্ত রাস্তার আংশিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রকল্পের সভাপতি রাস্তা সম্পর্কে কিছুই জানেন না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের সভাপতি নিজে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করছেন। নয়াবাড়ি বাজার হতে জয়নুদ্দিন মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার নির্মানে উচ্চতা অনুযায়ী স্লোভ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করেছি।
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: বেলাল হোসেন বলেন, এ ব্যপারে আমি পূর্বে কোন অভিযোগ পাইনি। যে যে প্রকল্পের বিষয়ে অভিযোগ ছিল সে গুলোর বিল পরিশোধ করি নাই। তবে এ কাজে যদি কোন অনিয়ম থাকে তাহলে আমি ব্যবস্থা নিব।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও সংবাদ